নিকলীতে পর্যটকশূণ্য-হতাশায় নৌকা ও হোটেল ব্যবসায়ীরা,বেড়ীবাঁধে ময়লার স্তুপ !
নজরে নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
বৈরী আবহাওয়ায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে নদীকন্যা খ্যাত নিকলী হাওর । বেচাকেনা নেই পর্যটনসংশ্লিষ্ট দোকানগুলোতে। মুষলধারে বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়ার প্রভাব পড়েছে পর্যটনকেন্দ্র হাওর এলাকার নিকলীতে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে গত চার দিন ধরে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাওরে আসা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা। অন্যদিকে হতাশায় ভুগছে নিকলী পর্যটক এলাকার মৌসুমী ব্যবসায়ী সহ নৌকার মাঝিরা। পর্যটকশূণ্য নিকলী সদরের বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন পাশে গড়ে উঠা হোটেল,রেস্তোরা,আবাসিক হোটেল,ভ্রাম্যামান দোকান,নৌকার মাঝিসহ অটোরিকশা চালকদের হতাশা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।অন্যদিকে স্থানীয় ও কিছু পর্যটকরা দাবি করেন,হোটেল,নৌকা,রেস্তোরায় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পর্যটকরা।কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন ভূমিকা নেই বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
জুন-জুলাই মাসে নিকলী,ইটনা,মিঠামইন,অষ্টগ্রাম উপজেলার হওরে পানি পুরোদমে আসার সময় হলেও এখনো পুর্ণ পানি না আসায় তেমন পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ছেনা। হাওর এলাকায় ৮মাস এলাকার মানুষ কৃষিনির্ভর হলেও ৪মাস থাকে নৌকা,আবাসিক হোটেল,খাবার হোটেল সহ নানা রেস্তোরাঁ নিয়ে ব্যস্ত।লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেও এখনো তেমন জমে ওঠেনি বেচাকেনাসহ পর্যটকদের ভিড়। পর্যটক শূন্য হওয়ায় ব্যবসায়ী,নৌকার মাঝি,মোটরযান চালকসহ সকলেই হতাশায় দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,বৃষ্টির কারণে অনেক পর্যটক গন্তব্যে ফিরে গেছেন। পর্যটকরা চলে যাওয়ায় অনেকটা খালি পড়ে আছে হোটেল- ও রিসোর্টগুলো। বেচাকেনা নেই খাবার হোটেলসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট অন্যান্য দোকানগুলোতে। তারা বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে দোকান বন্ধ রেখে বাড়িতে চলে গেছে।অতি বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষসহ পড়েছেন চরম বিপাকে।
খাবার হোটেল আল্লার দান হোটেলের স্বত্বাধিকারী মো:শরীফ বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে নিকলীতে কোনো পর্যটক নেই। সকাল থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। ১০জন কর্মচারীর বেতন মাসিক বেতন সহ আনুষাঙ্গিক খরচ আশি হাজার টাকা টাকা। খুবই খারাপ অবস্থায় দিন যাচ্ছে।অপরদিকে নিকলী হাওর বিলাস রেস্টুরেন্টের স্বাধিকারী মোস্তাক আহমেদ জানান,৮জন কর্মচারীসহ আনুষাঙ্গিক ১০ হাজার টাকা খচর হয়।কিন্তু গত চারদিনে ৫হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছিনা।পর্যটকশূণ্য হওয়ায় পুরো তিন সিজনে ২০লক্ষ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
আচার ও বাদাম ব্যবসায়ী জামাল ও শফিক বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে আমাদের দোকানগুলোতে কোনও বেচাকেনা নেই। বসে বসে সময় পার করছি। বর্তমানে পর্যটক না থাকার কারণে বেচাকেনা একেবারেই খারাপ যাচ্ছে।
নৌকার মাঝি তালেব জানান,গত পাঁচ দিন ধরে নৌকায় কোন ভাড়া নেই,এভাবেই পাড়ে হতাশা হয়ে পড়ে আছি।দৈনিক ৫হাজার টাকা ইনকাম করতে পারলেও এখ ৫শত টাকাও আয় হচ্ছেনা।পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
নিলীতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলেন, হাওরে বেড়াতে এসে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে। গত তিনদিন হোটেল থেকে বের হতে পারছি না। বেরীবাঁধে নেই কোনও পর্যটক। খাওয়ার হোটেলগুলো প্রায় বন্ধ। কয়েকটা হোটেল খোলা রয়েছে। তাতে তাজা খাবার নেই। হাওরে নেমে গোসল করেও আনন্দ পাইনি। বলতে গেলে হাতেগোনা কয়েকজন গোসলে নেমেছে। এককথায় বলা যায়—পর্যটকশূন্য নিকলী।
স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় পর্যটকশূন্য রয়েছে নিকলীতে।৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যটক থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এলাকা ছাড়ছেন তারাও। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে পর্যটনকেন্দ্রটি এখন পর্যটকশূন্য।
হোটেল আল আরাবির সত্বধিকারী আবুল কালাম বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় একেবারেই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে নিকলীতে। হোটেলগুলোতে ৫ শতাংশ পর্যটক রয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা লোকসানে রয়েছেন। আবাসিক হোটেলের ১৪টি রুম থাকলেও কোন পর্কটক নেই।গত এক সপ্তাহ ধরে আবাসিক হোটেলগুলো পর্যকট শূণ্য রয়েছে।কোটি টাকা ঋণ করে ব্যবসায় নামলেও হতাশায় দিন কাটতে হচ্ছে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীদের।
এদিকে নিকলী পর্যটন এলাকা হলেও পর্যটকদের জন্য গণ-শৌচাগার গুলো বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে, সড়ক বাতিগুলো(স্যোলার লাইট) নষ্ট।নেই কোন মেরামতের উদ্যোগ।নিরাপত্তা জোরদারে প্রশাসনের তেমন কোন ভূমিকা চোখে পড়ছেনা।সড়কের পাশে পড়ে আছে ময়লার ভাগাড়।সব দিক দিয়ে নিকলী হাওরের বেড়ীবাঁধ এখন হ য ব র ল হয়ে পড়ে আছে।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা মজুমদার মুক্তি জানান,অচিরেই গণ শৌচাগার, ময়লার ভাগাড়সহ পরিস্কারে অচিরেই উদ্যোগ নেবেন।